প্রতিধ্বনি

প্রতিধ্বনি
-চিন্ময় মহান্তী

 

আর সেরকম করে ছবি আঁকা হয়নি কোনোদিন
দশটা বছর আগে যেমনটা হয়েছিল ,
সেদিন শ্বেত শুভ্র পট ছিল রঙিন রঙ ছিল তুলি ছিল
জীবনের পথটা ছিল সমতল সরলরৈখিক ।
উজান পথের পথিক হয়ে দৃষ্টি হয়েছে সীমাবদ্ধ
পিছনের ঢাল টানে বারবার -করে রাখে আবদ্ধ ।
ধূসর পটের উপর সে ছবি আঁকা যায় না
প্রচেষ্টা করাটাও বৃথা আস্ফালন বোই কিছু নয় ।
গোধূলির লাবণ্য গায়ে মেখে তুই যখন ফিরে যেতি
স্বর্নচম্পা আমায় কতবার মিনতি করে বলেছিল —
ওরে হতভাগা একবার আমার মুখপানে চেয়ে দেখ !
আমি খুব রাগ করে মনে মনে বলতাম –
স্বর্নচম্পা তুই আমায় গালাগাল দিচ্ছিস ,
একদিন একদিন হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হবি তুই !
স্বর্নচম্পা ছাই হয়নি , ওর হতভাগা বলাটা হয়েছে বাস্তব ।
চোখের প্লাবণ আমি কখনো দেখিনি , সেদিনই দেখলাম
যেদিন তুই আর এলিনা বিকেলের নদী তটে ,
আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে –
স্বর্নচম্পা তুই ঠিকই বলেছিলি আমি সত্যি হতভাগা ।
গগনের নীলিমায় যখন একটি একটি করে
তারারা জেগে ওঠে আপন মায়া বিলায় ,
আমি তখন ভালবাসা খুঁজতে নামি বিষাদের সমুদ্রে ।
জানিস তুই চলে যাওয়ার পর —
একদিন ভালবাসা খুঁজতে গিয়েছিলাম বসন্তের কাছে ,
ও আমায় বলেছিল —
ভালবাসা পলাশ ফুটলে আসে আবার কালবৈশাখীতে চলে যায় ,
আমি বুঝতে পারিনি ওর কথার মানে গূঢ়গভীরতা ।
সেদিন যখন স্বর্নচম্পার সঙ্গে আবার দেখা হলো
ও আমায় দেখে বললো –
ওরে হতভাগা না পাওয়ার বেদনার চেয়ে ত্যাগের আনন্দ বেশি ,
নিজের থেকে অপরের ভালো চাওয়ার মধ্যে একটা মাহাত্য আছে ।
আমি উত্তর করিনি —
নির্বাক হয়ে শুনেছি স্বর্নচম্পার কথার প্রতিধ্বনি ,
তাহলে আমি কি তোর ভালো চাইতে পারিনি !
ভালোই তো চেয়েছি প্রতিনিয়ত , তাহলে —
তাহলে এ কোন ভালো চাওয়ার কথা বলছে স্বর্নচম্পা !
আমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না , মাথাটা বনবন করছে
কেউ আছো ?
আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাও—-
এ কোন ভালোচাওয়ার কথা বলছে স্বর্নচম্পা।
হ্যাঁ পেয়েছি খুঁজে পেয়েছি —-
আমি তাকে ভালোবাসা দিতে চেয়েছি শুধু ভালোবাসা
কিন্তু অভাবের জানালা দিয়ে ভালোবাসা কবে যে উড়ে গেছে
একদম বুঝতে পারিনি– একদম বুঝতে পারিনি !
স্বর্নচম্পা ওর ভালো চাওয়ার মাহাত্ম্য খুঁজে পেয়েছি আমি
বুকের ভেতরটা ভীষণ হালকা লাগছে স্বর্নচম্পা
আমি ওর ঐশ্বর্যসুখ কেড়ে নিই নি !
আর সেরকম করে ছবি আঁকা হয়নি কোনোদিন
দশটা বছর আগে যেমনটা হয়েছিল,
সেদিন শ্বেত শুভ্র পট ছিল রঙিন রঙ ছিল তুলি ছিল।

Loading

Leave A Comment